পিন ছাড়াই UPI লেনদেন! বায়োমেট্রিক যাচাইকরণের যুগে বড় পদক্ষেপের পথে ভারত

নিউজ ডেস্কঃ ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে UPI বা ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন UPI ব্যবহার করে সহজেই অর্থ প্রেরণ ও গ্রহণ করেন। মোবাইল অ্যাপ যেমন Paytm, Google Pay, PhonePe কিংবা অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে এই লেনদেন সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এতদিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট ৪ বা ৬ সংখ্যার পিন কোড ব্যবহার করে লেনদেন অনুমোদিত হতো। তবে শিগগিরই এই প্রচলিত পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। দেশের UPI নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (NPCI) পিনভিত্তিক যাচাইকরণের পরিবর্তে বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা ভারতীয় ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

Whatsapp Join

NPCI-এর নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীদের আর পিন মনে রাখার প্রয়োজন হবে না। বরং তারা স্মার্টফোনে আগে থেকেই নিবন্ধিত ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডির মাধ্যমে লেনদেন অনুমোদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, যেভাবে ব্যবহারকারীরা ফোন আনলক করার জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবহার করেন, সেভাবেই UPI লেনদেনও সম্পন্ন হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যবহারকারী অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে নিজের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে রাখেন, তাহলে পেমেন্টের সময় কেবল সেই আঙুলের ছাপ দিলেই অর্থ প্রেরণ করা সম্ভব হবে। একইভাবে, আইফোন ব্যবহারকারীরা ফেস আইডি ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন। ফলে প্রতিবার পিন টাইপ করার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে এবং লেনদেন আরও দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে একাধিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব। প্রথমত, অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডির মাধ্যমে তাদের ডিভাইস আনলক করে থাকেন। ফলে লেনদেনের সময় আলাদা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হবে না, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় ব্যবহারকারীরা পিন ভুলে যান বা ভুল পিন টাইপ করে ফেলেন, যার ফলে অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ব্লক হয়ে যায়। বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। তৃতীয়ত, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি নকল করা অত্যন্ত কঠিন হওয়ায় সাইবার অপরাধীদের পক্ষে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা আরও জটিল হবে। চতুর্থত, পিন টাইপ করার প্রয়োজন না থাকায় লেনদেন দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে, যা ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

তবে এই সুবিধার পাশাপাশি কিছু গুরুতর উদ্বেগও রয়েছে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বিষয় হলো মোবাইল চুরি হলে বায়োমেট্রিক যাচাইকরণের মাধ্যমে অনায়াসে লেনদেন করা যেতে পারে। কারণ ফোনেই যদি ব্যবহারকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি সংরক্ষিত থাকে, তাহলে চোর সহজেই সেই ফোন ব্যবহার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। ফলে এই ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অর্থ সুরক্ষিত রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া ফোন হারিয়ে গেলে অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য নির্দিষ্ট ও দ্রুত প্রটোকল তৈরি করতে হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ হলো ডিভাইস নির্ভরতা বেড়ে যাওয়া। বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ পদ্ধতি পুরোপুরি নির্ভর করবে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনের উপর। ফলে ফোন নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। বিকল্প কোনো লেনদেন পদ্ধতি না থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। NPCI-এর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক ও অ্যাপ নির্মাতাদের উন্নত প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প সমাধানের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় UPI অ্যাপ যেমন Paytm, Google Pay এবং PhonePe ইতিমধ্যেই তাদের অ্যাপ লক করার জন্য বায়োমেট্রিক স্ক্যানারের সুযোগ দিয়ে থাকে। ফলে NPCI-এর পরিকল্পনা কার্যকর হলে এই অ্যাপগুলির পক্ষেই প্রথমে নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে। কারণ ব্যবহারকারীরা এরই মধ্যে অ্যাপের নিরাপত্তার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করার সঙ্গে পরিচিত।

ভারতের প্রায় প্রতিটি নাগরিকের আধার কার্ডের সঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যান সংযুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে এই তথ্য ব্যবহার করে আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, লেনদেনের সময় যদি ডিভাইসের বায়োমেট্রিক তথ্য কেন্দ্রীয় আধার ডাটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, তাহলে নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে। যদিও NPCI-এর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবুও সম্ভাবনাটি অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানের ফলে দেশে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই এক বড় পরিবর্তন এসেছে। নগদবিহীন অর্থনীতির দিকে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। NPCI-এর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সেই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। তবে এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চুরি হওয়া ফোন থেকে লেনদেন বন্ধ রাখা, জরুরি অবস্থায় দ্রুত অ্যাকাউন্ট ব্লক করার ব্যবস্থা তৈরি করা এবং ফান্ড পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট প্রটোকল চালু করা জরুরি।

ব্যবহারকারীদেরও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। স্মার্টফোনে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বা লক ব্যবহার করা, অনিরাপদ অ্যাপ ইনস্টল না করা এবং ব্যাংক বা NPCI থেকে প্রদত্ত নিরাপত্তা নির্দেশাবলী মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সচেতনতার মাধ্যমে অনেক ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।

Telegram Join

Leave a Comment

Join Our WhatsApp Group!