Patanjali Launched Electric Cycle: মাত্র ₹৬৫০০, একবার চার্জে ২০০ কিমি চলবে, সর্বোচ্চ গতি ৪০ কিমি/ঘন্টা

নিউজ ডেস্ক : ভারতের বাজারে পতঞ্জলি নামটি আজ আর নতুন নয়। আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক উপাদাননির্ভর খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ, গৃহস্থালী সামগ্রী থেকে শুরু করে এফএমসিজি পণ্যের জগতে প্রতিষ্ঠানটি এক অদ্ভুত অবস্থান তৈরি করেছে। স্বদেশী ভাবধারাকে সামনে রেখে পতঞ্জলি তাদের ব্যবসা বিস্তার করেছে এক অনন্য কৌশলের মাধ্যমে। কিন্তু এবার তারা যে পথে পা বাড়াতে চলেছে, সেটি নিঃসন্দেহে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। কারণ এবার পতঞ্জলি নাম উঠছে অটোমোবাইল খাতে, আর সেই সূত্রেই আলোচনায় এসেছে তাদের আসন্ন বৈদ্যুতিক সাইকেল। ভারতের ক্রমবর্ধমান সবুজ যানবাহনের চাহিদার মাঝে পতঞ্জলির এই পদক্ষেপ শুধু ব্যবসায়িক কৌশল নয়, বরং এক নতুন সামাজিক বার্তাও বটে। সাশ্রয়ী দামে আধুনিক প্রযুক্তি আর পরিবেশবান্ধব চলাচলকে মিলিয়ে এই সাইকেল বাজারে আসতে পারলে, তা নিঃসন্দেহে ভারতীয় সবুজ চলাচল আন্দোলনের জন্য এক বড় উপহার হবে।

Whatsapp Join

পতঞ্জলির বৈদ্যুতিক সাইকেল নিয়ে প্রথমেই বলা দরকার এর মূল দর্শনকে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরেই “স্বদেশী” ভাবনা প্রচার করে এসেছে। খাদ্য, স্বাস্থ্য কিংবা গৃহস্থালী সামগ্রীর ক্ষেত্রে যেমন তারা দেশীয় উৎপাদন ও ভোক্তাদের আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিয়েছে, তেমনি এবার তারা এই একই নীতি প্রয়োগ করতে চাইছে পরিবহন ক্ষেত্রে। ভারতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব চলাচলের প্রয়োজনীয়তা প্রতিদিনই বাড়ছে। যানজট, দূষণ আর ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দামের চাপের মধ্যে সাধারণ মানুষ সস্তায়, টেকসই এবং আধুনিক সমাধান খুঁজছে। ঠিক এই জায়গাতেই পতঞ্জলির বৈদ্যুতিক সাইকেল নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে। ছাত্রছাত্রী, অফিস-গামী কর্মী কিংবা স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ—সবার কাছেই এটি হতে পারে সাশ্রয়ী অথচ কার্যকর এক ভ্রমণ মাধ্যম।

এখন আসা যাক এই সাইকেলের প্রযুক্তিগত দিকগুলোয়। পতঞ্জলির বৈদ্যুতিক সাইকেল চালিত হবে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মাধ্যমে। এই ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেওয়ার মতো করে তৈরি করা হয়েছে। একবার চার্জে এটি ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা ভারতের বৈদ্যুতিক সাইকেল খাতে একেবারেই বিরল এবং নিঃসন্দেহে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে। প্রতিদিনের যাতায়াত কিংবা দীর্ঘ পথের জন্যও এই রেঞ্জ যথেষ্ট। আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো এর দ্রুত চার্জিং ব্যবস্থা। মাত্র ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটেই ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে যাবে। ফলে যারা প্রতিদিন অফিস বা কলেজে যাওয়ার আগে দ্রুত চার্জ করতে চান, তাদের জন্য এটি হবে নিখুঁত সমাধান।

শুধু ব্যাটারি নয়, এর মোটরও সমানভাবে আলোচনার দাবিদার। সাইকেলটিতে থাকছে ২৫০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রাশলেস হাব মোটর। নিয়ম অনুযায়ী এটি সর্বোচ্চ ২৫ কিমি/ঘণ্টা গতিতে চলার উপযোগী। তবে বাস্তবে এর গতি আরও বেশি হতে পারে। খবর অনুযায়ী পাওয়ার মোডে এই সাইকেল ৫০ থেকে ৫৫ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম। এত উচ্চ গতির সঙ্গে তিনটি আলাদা রাইডিং মোড থাকছে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও বহুমুখী করবে। ইকো মোডে ব্যাটারির সর্বাধিক সাশ্রয়ী ব্যবহার হবে, ফলে দীর্ঘ দূরত্বের জন্য এটি সেরা। সিটি মোড দৈনন্দিন শহুরে যাতায়াতের জন্য আদর্শ, যেখানে গতি ও শক্তি উভয়ই ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে। আর পাওয়ার মোড ব্যবহারকারীদের দ্রুত ত্বরণ ও বেশি গতির অভিজ্ঞতা দেবে, যা স্বল্প দূরত্বে বিশেষ কার্যকর। শুধু তাই নয়, এই সাইকেল ব্যবহার করা যাবে দুইভাবে—প্যাডেল-অ্যাসিস্ট ও থ্রটল মোডে। ফলে যে চায় শারীরিক কসরত করে চালাতে, সে প্যাডেল ব্যবহার করতে পারবে, আবার যে কেবল বৈদ্যুতিক শক্তিতেই চালাতে চায়, সে থ্রটল ব্যবহার করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ “৩.৫০ লাখ টাকায় আধুনিক সুবিধা—টাটা ন্যানো ২০২৫ বাজারে”

আধুনিক যুগে শুধুমাত্র ভালো পারফরম্যান্সই যথেষ্ট নয়, প্রযুক্তিগত স্মার্ট ফিচারও সমানভাবে প্রয়োজন। পতঞ্জলির বৈদ্যুতিক সাইকেলেও এই দিকটিতে রাখা হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এতে থাকবে ৩.৫ ইঞ্চির ডিজিটাল ডিসপ্লে, যেখানে রিয়েল-টাইম তথ্য যেমন গতি, ব্যাটারির অবস্থা, ট্রিপ মিটার ও অনুমানিক রেঞ্জ দেখা যাবে। ব্যবহারকারীরা চলার সময় নিজেদের স্মার্টফোন চার্জ করার জন্য ইউএসবি পোর্টও পাবেন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্লুটুথ সংযোগ ও মিউজিক সিস্টেম, যা যাত্রাকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে। নিরাপত্তার জন্য এতে থাকছে অ্যান্টি-থেফট লক সিস্টেম। এছাড়া স্মার্ট মোবাইল হোল্ডার ফোনকে নিরাপদে ধরে রাখবে, ফলে চলার সময় দিকনির্দেশ কিংবা অন্যান্য অ্যাপ সহজেই ব্যবহার করা যাবে। রাতের যাত্রার জন্য শক্তিশালী এলইডি হেডলাইট ও টেইললাইটও থাকবে, যা শুধু দৃশ্যমানতাই বাড়াবে না, বরং সড়ক নিরাপত্তাকেও নিশ্চিত করবে।

নিরাপত্তার কথা যখন উঠল, তখন ব্রেকিং সিস্টেমের কথাও বলা প্রয়োজন। সামনে থাকছে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম বা ডিস্ক ব্রেক, যা নিশ্চিত করবে নির্ভরযোগ্য থামার ক্ষমতা। উচ্চ গতিতে কিংবা ভিড় রাস্তায় হঠাৎ থামতে হলেও এই সিস্টেম কার্যকর হবে। ফলে শহুরে ও অর্ধ-শহুরে এলাকায় এটি ব্যবহার করা আরও নিরাপদ হবে।

গতিবেগ, রেঞ্জ ও চার্জিং ক্ষমতার দিক থেকেও পতঞ্জলির সাইকেল বেশ প্রতিযোগিতামূলক। পাওয়ার মোডে সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৫০–৫৫ কিমি/ঘণ্টা। একবার চার্জে এটি ২০০ কিমি পর্যন্ত চলতে পারবে, যা সাধারণত বৈদ্যুতিক সাইকেলের তুলনায় অনেক বেশি। দ্রুত চার্জিংয়ের ফলে অল্প সময়েই সাইকেল আবার রাস্তায় নামার মতো প্রস্তুত হয়ে যাবে। এইসব বৈশিষ্ট্য একে ভারতীয় বৈদ্যুতিক যানবাহনের বাজারে একেবারে আলাদা জায়গায় বসাবে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আসে দামের প্রসঙ্গে। পতঞ্জলির লক্ষ্য সবসময়ই সাধারণ মানুষের নাগালে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। এই সাইকেলের দাম ধরা হচ্ছে মাত্র ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে। এই দামে এত ফিচার-সমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক সাইকেল পাওয়া একেবারেই অনন্য ঘটনা। অন্য ই-বাইক বা ই-স্কুটারের তুলনায় এটি অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে। ফলে ছাত্রছাত্রী, মধ্যবিত্ত পরিবার কিংবা অফিস-গামী কর্মীদের কাছে এটি হবে আকর্ষণীয় সমাধান।

এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও, বাজারে যে জোর আলোচনা চলছে, তাতে মনে করা হচ্ছে শিগগিরই এই সাইকেলের উন্মোচন ঘটবে। যদি পতঞ্জলি সত্যিই এই প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে এটি নিঃসন্দেহে ভারতের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় লিখবে। ভারতীয় বাজারে যেখানে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব চলাচল ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, সেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে এত প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ এক সাইকেল গ্রাহকদের কাছে এক বিরাট আকর্ষণ তৈরি করবে।

Telegram Join

পতঞ্জলির এই পদক্ষেপ কেবল একটি ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ নয়, বরং ভারতের সবুজ চলাচল আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যপণ্য এবং এখন বৈদ্যুতিক সাইকেল—প্রতিটি ক্ষেত্রেই পতঞ্জলি ভারতীয় সমাজকে স্বনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব পথে চালিত করতে চাইছে। আগামী দিনে যদি এই সাইকেল সত্যিই প্রত্যাশিত সাড়া জাগাতে পারে, তবে এটি শুধু একটি যানবাহন নয়, বরং ভারতীয় জীবনে এক নতুন পরিবেশ-সচেতন সংস্কৃতির সূচনা ঘটাতে পারে।

Leave a Comment

Join Our WhatsApp Group!